ফুলকি ডেস্ক | প্রকাশিত ২০ জানুয়ারী, ২০১৯ ১৫:২৮:৫২
ফুলকি ডেস্ক : জাপানের ছোট্ট গ্রাম কুনাটাচির বাসিন্দা ইউকিয়ো মিয়াজাকি কিডনি ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন। এছাড়া ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ তো আছেই। বয়সও হয়ে গেছে ৮৫ বছর। কিছুদিন পরপর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়াটা তার জন্য কষ্টকরই বটে। মিয়াজাকি একা নন, জাপানের অন্তত তিন কোটি মানুষ এ ধরণের সমস্যায় ভুগছেন।
জাপানীদের গড় আয়ু বর্তমানে ৮৪ বছর। এদিক থেকে তারাই বিশ্বে এক নম্বরে আছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বয়সই ৬৫ এর ওপরে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ১৫ শতাংশ আর জার্মানিতে ২১। কোনো দেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি হওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে জাপান তাদের বৃদ্ধ নাগরিকদের নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। কারণ দেশটিতে সরকারিভাবেই নাগরিকদের হেলথ ইন্স্যুরেন্সের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।
গত বছর জাপানে স্বাস্থসেবা খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩৮ বিলিয়ন ডলার। এটা জাপানের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। জাপান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী একজন নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবায় খরচ হয় বছরে ৯ লাখ ৪২ হাজার ইয়েন। সেখানে গড়পড়তা একজন মানুষের লাগে ২ লাখ ২১ হাজার ইয়েন। এ থেকেই বোঝা যায় বৃদ্ধ নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবায় জাপান সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটিতে জন্মহার কম এবং বয়স্ক মানুষের বৃদ্ধির হারকে জাতীয় সংকট হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে।
স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় কমাতে জাপান বেশকিছু উদ্যোগও নিয়েছে। তারা বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যসেবায় কাটছাঁটের পরিবর্তে তাদের যেন অসুখ কম হয় সেদিকে নজর দিচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলঝেইমার্সসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করে তুলছে দেশটির স্বাস্থসেবীরা। বয়স্ক নাগরিকদের ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, ২০৪০ সাল নাগাদ জাপানের ৩৫ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকবে। এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগানের জন্য আগামী অক্টোবরের মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে অনাকাঙ্ক্ষিত ট্যাক্স বসানোর পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। সারাবিশ্বের মানুষ আয়ু বাড়ানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে আসছে। সেখানে জাপান কি পারবে আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়া অতি আয়ুর এই জাতীয় সংকট সামাল দিতে?